দিন দিন পথশিশুর সংখ্যা বাড়ছে বরিশালে। আর এই পথশিশু বিভিন্নভাবে ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িয়ে
পড়ছে। তারা শিক্ষার চেয়ে ভিক্ষায় বেশি আগ্রহী । স্কুল ফাঁকি দিয়ে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন ভিক্ষা করছে এসব শিশু। ওদের ভিক্ষা চাওয়ার আবদারে বিব্রত হয়ে শেষ পর্যন্ত দু-একজন নগরবাসী ৫ থেকে ১০ টাকা ধরিয়ে দিচ্ছেন তাদের।
এইসব পথশিশুদের স্কুলে ফেরাতে বা সমস্যার সমাধানে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষক। ফলে দিন দিন নগরীতে বেড়েই চলেছে শিশু ভিক্ষুকদের সংখ্যা।
নগরীর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করছে অনেক শিশু। অনেক শিশু স্কুল ফাঁকি দিয়ে সড়কে ভিক্ষা করে। এ থেকে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে কোনো কোনো শিশু সংসারে অর্থের জোগান দিচ্ছে। আর কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের নেশায় (ডেন্ডি, গাঁজা, সিগারেটের) আসক্ত হচ্ছে।
বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জরিপের মাধ্যমে উঠে এসেছে বরিশাল জেলায় ৬ হাজার ভিক্ষুক রয়েছে।সংস্থাগুলোর করা জরিপ অনুযায়ী, প্রতি বছর নদীভাঙন, ফসলহানি, দরিদ্র অবস্থায় উপনীত হওয়াসহ নানা কারণে গ্রামের ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী কাজের সন্ধানে বা উন্নত জীবনের আশায় শহরমুখী হচ্ছে। আশানুরূপ কাজের সুযোগ না পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত হচ্ছে তারা।
বরিশাল বিএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোরশেদা নাজনিন বলেন, ‘শিশুরা অনেক কিছুই জানে না বা বোঝে না। মা-বাবা বা অন্যরা শিশুদের ব্যবহার করে সহানুভূতি আদায় করে ভিক্ষা করছে । শিশুরা ছোট থেকে এ ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকার ফলে তারা পরনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। পরে তারা এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। শিশুকাল থেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত থাকার কারণে তাদের মানসিক গঠন ঠিকমতো হয় না। শিশু ভিক্ষুকদের শিক্ষার আলোয় এনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
বরিশাল জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘যারা স্কুল ও মাদ্রাসা ফাঁকি দিয়ে ভিক্ষা করছে তাদের ঘরে ফেরানোর দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের। এসব শিশুর সুরক্ষার জন্য প্রথমে কাউন্সেলিং করতে হবে। যেসব শিশু নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে, এদের এখন সঠিক পথে পরিচালিত করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হবে। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিশু ভিক্ষা বন্ধ করতে হবে।’