নারীর স্বাস্থ্যের জন্য মেয়েবন্ধুরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধু কেন দরকার, নতুন করে সেটা নিয়ে আলোচনার দরকার নেই। যেকোনো লিঙ্গ, বয়সের বন্ধুর সঙ্গেই জীবনের ছোটখাটো আনন্দ, দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়াটা দারুণ। তবে নারীর স্বাস্থ্যের জন্য মেয়েবন্ধুরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
নারীর জীবনে নারীবন্ধুর গুরুত্ব কেন বেশি, তার পাঁচ কারণ জানিয়েছে জনপ্রিয় মার্কিন ম্যাগাজিন ‘বেটার হোমস অ্যান্ড গার্ডেনস’।
১. নারীরা একই ধরনের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যান
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নারী–পুরুষের প্রতিক্রিয়া কিংবা পরিস্থিতি সামলানোর ধরন আলাদা। মেয়েদের মধ্যে স্বভাবতই যত্ন করা বা মমতা দেখানোর মতো মাতৃত্বসুলভ গুণাবলি থাকে। ফলে খারাপ সময়ে ছেলেবন্ধুর থেকে আপনার মেয়েবন্ধু আপনাকে ভালো বুঝবে, সহানুভূতি জানাতে পারবে। নিজেদের একই ধরনের বা কাছাকাছি অভিজ্ঞতা ভাগ করতে পারবে। জীবনসঙ্গী বা শ্বশুরবাড়ি–সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে আপনার নারীবান্ধবী যেভাবে আপনার অবস্থা অনুধাবন করতে পারবে, পুরুষবন্ধু পারবে না।
ঠিক এই কারণেই চাপ সামলাতে নারীবন্ধুর তুলনা নেই। কেননা নারীদের চাপ সামলানোর ধরন পুরুষদের থেকে আলাদা। মানসিক চাপে পড়েও নারীরা সাধারণত অন্যের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করার মানসিকতা দেখান। নিজের আশেপাশের মানুষের যত্ন নেন। অন্য নারীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের খোঁজ নেওয়ার, সাহায্য করার চেষ্টা করেন।
২. ভাবনার খোরাক জোগায়
জীবনসঙ্গীর ভালোবাসা ও সমর্থন জীবনকে অনেক সহজ করে। তবে প্রয়োজনের সময় একজন নারীবন্ধু আপনাকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে সাহায্য করতে পারে।
ধরুন আপনি একটি সম্পর্কে আছেন। সম্পর্কের মধ্যে ডুবে থেকে ভালো-মন্দ অনেক কিছুই উপলব্ধি করা যায় না। এ রকম সময়ে আপনার কাছের বান্ধবী বাইরে থেকে আপনার সম্পর্কটা পর্যবেক্ষণ করে আপনাকে সৎ পরামর্শ দিতে পারেন। কেননা সম্পর্কে সঙ্গীর কাছ থেকে নারীদের চাওয়া অনেকটা একই রকম। তাঁর পরামর্শ আপনাকে জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
৩. পুরুষবন্ধুর চেয়ে নারীবান্ধবী আত্মবিশ্বাস বাড়ায় বেশি
একজন ভালো মেয়েবন্ধু আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সাহায্য করে। সে জানাবে, অফিসের এই পদোন্নতি কেন আপনার প্রাপ্য অথবা কেন আপনার ভালোবাসার মানুষটির উচিত আপনার প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া।
গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ নারী, নারীবন্ধুর সঙ্গে সময় কাটিয়ে আত্মবিশ্বাসী অনুভব করেন। এটা পুরুষবন্ধুর সঙ্গে একই পরিমাণ সময় কাটানোর ফলে আত্মবিশ্বাসে যে প্রভাব পড়ে, তার চেয়ে ঢের বেশি। আর এটা ঘটে, কেননা, নারীদের চিন্তার গতিবিধি, চাহিদা, অন্যকে ‘জাজ’ করার মানদণ্ডগুলো অনেকটা একই রকম। তাই একজন নারী নারীকে যেভাবে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারেন, পুরুষ সেভাবে পারেন না।
৪. জীবনসঙ্গীর চেয়েও নারীরা নারীদের ভালো বোঝেন
অপ্রিয় সত্য কথা শুনতে আমরা কেউই তেমন পছন্দ করি না। তাই অন্যরাও বলতে চান না। এ ক্ষেত্রে আপনার কাছের বান্ধবী হতে পারে ব্যতিক্রম। সে হয়তো আপনার ভালোর জন্য কঠিন কথাটাও সহজ করে বলে ফেলবে। কারণ, মেয়েবন্ধুটি প্রথমে আপনার ধারণা, চিন্তাভাবনা এবং মতামত সময় নিয়ে শুনবে। তারপর সৎ পরামর্শ দেবে।
গবেষণা বলছে, জীবনসঙ্গীর চেয়েও নারীবন্ধুরা নারীদের বেশি বোঝে। তাঁরা জানেন, কখন আপনার মনের কথা শোনার জন্য কাউকে দরকার, কখন কাঁদার জন্য একটি কাঁধ প্রয়োজন, আর কখন সময় শুধু আনন্দ করার আর কখন কঠিন কথাটা বলে ফেলতে হবে!
৫. নারীদের গড় বন্ধুত্ব টেকে ১৬ বছর, যা রোমান্টিক সম্পর্ক থেকেও বেশি
আপনার কি একজন ভালো বান্ধবী আছে? তাঁকে পাশে রাখুন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্ক কেবলই পরিণত আর গভীর হবে। গবেষণা বলছে, নারীদের বন্ধুত্ব গড়ে ১৬ বছর টেকে। যেখানে রোমান্টিক সম্পর্কের গড় আয়ু ১০ বছর। নতুন কিছু করার ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান কিংবা পেশাগত জীবনে পরামর্শ দেওয়া, মেয়েবন্ধুরা হতে পারে অনুপ্রেরণার উৎস।
এই সব কারণেই নারীরা নারীবন্ধু খোঁজেন। আর একবার ঠিকঠাক বান্ধবীর খোঁজ মিললে উভয়পক্ষ থেকেই সম্পর্কটাকে দীর্ঘ মেয়াদে টিকিয়ে রাখার তাগিদ অনুভব করেন। আর তাই নারীতের নারীতে বন্ধুত্বের গড় আয়ু ছাড়িয়ে গেছে রোমান্টিক সম্পর্ককেও!